
বুধবার ২১ মে ২০২৫
আকাশ দেবনাথ: চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আসছে ত্বকচর্চার নিত্যনতুন সাধন। সম্প্রতি রূপটানে আগ্রহী ব্যক্তিদের নোটবইতে যুক্ত হয়েছে এমন একটি নাম যার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন সাধারণ গৃহবধূ থেকে চিত্রতারকারাও - পিআরপি ফেসিয়াল। বিষয়টি ঠিক কী? জানতে এমডি ডার্মাটোলজি ডা. শ্রুতি বর্মণের সঙ্গে কথা বলল আজকাল ডট ইন।
রূপটানে আগ্রহী বহু মানুষের মুখে মুখে এখন পিআরপি থেরাপির কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি ঠিক কী? প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক বলেন, “পিআরপি কথাটির অর্থ, ‘প্লেটলেট রিচ প্লাজমা’। আমাদের রক্তে যেমন শ্বেত রক্তকণিকা বা লোহিত রক্তকণিকা থাকে তেমনই থাকে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট। যখন শরীরে কোনও আঘাত লাগে তখন সেই অঞ্চলে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এই অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট-এর মূল কাজ। কিন্তু তার পাশাপাশি প্লেটলেটের আরও একটি ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ থাকে। এই গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। মূলত এই বিষয়টির উপর ভিত্তি করেই চুল এবং ত্বক পুনরুজ্জীবিত করতে এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়।”
অর্থাৎ চুল এবং ত্বক, দু’ক্ষেত্রেই এই থেরাপি কার্যকর। মূলত মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে এবং মুখের চামড়ার তলায় প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা ইঞ্জেক্ট করা হয়। স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রে এতে নতুন নতুন ফলিকল তৈরি হয়, রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, চুলের ঘনত্ব বাড়ে এবং চুল পড়ার সমস্যাও কমে। মুখের ক্ষেত্রে যাঁদের বলিরেখা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া কিংবা রোদে পোড়া ত্বকের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এই চিকিৎসায় উপকার পান। আসলে এই সব কিছুর নেপথ্যে রয়েছে পূর্বে উল্লিখিত গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি, এমনই জানিয়েছেন চিকিৎসক।
কোন বয়সের মানুষরা বেশি আসছেন এই থেরাপি নিতে? চিকিৎসকের কথায়, “দেখুন একটা কথা আছে, প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুণের বিচার। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি অনেকেই এই কথাটা মানেন, কেউ কেউ তো নিজের ত্বক এবং চুল নিয়ে রীতিমতো হীনম্মন্যতায় ভোগেন। অনেকে মনে করেন চাকরির জন্যেও ঝকঝকে লুকের দরকার। তাই এই বয়সি ব্যক্তিরা বহু সংখ্যায় আমাদের কাছে আসেন। পুরুষদের মধ্যে অনেকের বংশগতির কারণে তাড়াতাড়ি চুল পড়ে যায়, তাঁরাও আসেন। অন্যদিকে যাঁরা ৫০ পেরিয়ে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে মুখের পিআরপি করার প্রবণতা বেশি।”
ঠিক কীভাবে দেওয়া হয় এই থেরাপি? চিকিৎসকের কথায়, “সাধারণত খুব সরু সুচ ব্যবহার করা হয় এই থেরাপির জন্য। অনেকে ইনসুলিন নেওয়ার নিডল ব্যবহার করেন, কারণ ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের সুচ খুবই সূক্ষ্ম।” এই পদ্ধতির একটি সুবিধা হল, যে প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়, সেটা তাঁর নিজের দেহ থেকেই সংগ্রহ করা। কাজেই নিজের রক্ত থেকে অ্যালার্জি হওয়ারও আশঙ্কা নেই বললেই চলে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগীর শিরা থেকে রক্ত নিয়ে প্রথমে তাকে সেন্ট্রিফিউজ করা হয়। অর্থাৎ রক্ত থেকে ঘন প্লাজমা আলাদা করা হয়। এর পর প্লেটলেটে ঠাসা সেই প্লাজমা রোগীর ত্বকে প্রবেশ করানো হয়।
তবে একবার করালে হবে না। চিকিৎসক বলেন, “কমবেশি ৪০ মিনিট সময় লাগে একটি সেশনে। প্রত্যেকের শরীর আলাদা, তাই কার ত্বকে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই কত দিন অন্তর এই থেরাপি প্রয়োগ করা হবে। তবে সাধারণভাবে প্রথমে মাসে অন্তত একবার করে পিআরপি করাতে হয়। ছয় বার করানোর পর থেকে বছরে দু'বার করানোই যথেষ্ট।”
পিআরপি করাতে আসার আগে বা পরে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়? মুখে পিআরপি করানোর আগে বিশেষ কোনও নিয়ম মানার দরকার পড়ে না। তবে এই বিষয়ে সতর্কতার বার্তা দিয়েছেন চিকিৎসক। ডা. বর্মণের কথায়, “যাঁদের কোমরবিডিটি থাকে তাঁদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। যেমন ধরুন ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা থাকলে আমরা সচরাচর পিআরপি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিই। আর থেরাপি নেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা মুখে কিছু মাখতে বা মুখ ধুতে নিষেধ করা হয়। তার পর থেকে সানস্ক্রিন আর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়।”
তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি বেশ খরচ সাপেক্ষ। কলকাতায় পিআরপি করাতে প্রতিবার অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। মূলত কী ধরনের কিট ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর খরচ নির্ভর করে। এবিষয়ে চিকিৎসক জানান, পিআরপির সঙ্গে অনেকে ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর কনসেন্ট্রেট’ বা জিএফসি কিটও ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে খরচ আরও বাড়তে পারে।
যাঁরা এই পদ্ধতিতে ত্বকের জেল্লা ফেরাতে চান, বা চুল পড়া কমাতে চান তাঁদের থেরাপি নেওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। বলেছেন, “দেখুন, এই থেরাপির জন্য আলাদা করেহাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। গোটাটাই আউটডোরে হয়। কিন্তু যেখান থেকেই করান, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের হাতেই করানো উচিত। আজকাল বহু ছোট ছোট ক্লিনিক খুলেছে যেখানে ডাক্তারি পাশ না করেই এই থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাথায় রাখবেন, গোটা বিষয়টি কিন্তু রক্ত সংক্রান্ত। ইঞ্জেকশনের ব্যবহার আছে। তাই ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত না করা হলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। কাজেই এই ধরনের জায়গা থেকে চিকিৎসা না করানোই ভাল। যদি কোনও কারণে ইনফেকশন হয় তবে মুখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এই ফুসকুড়ি থেকে পুঁজও বেরতে পারে। স্ক্যাল্পে করালে, এই উপসর্গগুলি ছাড়াও চুলকানি হতে পারে। তাই আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে।”
ক্যানসারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য! বিশ্বের প্রথম মূত্রাশয় প্রতিস্থাপন করলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক!
যোনিদ্বার বন্ধ হয়ে গজিয়ে উঠল ‘পুরুষাঙ্গ’! রোগীর যৌনাঙ্গের অবস্থা দেখে থরথর কাঁপুনি চিকিৎসকদের
বুকে ব্যথা নেই, তবুও হতে পারে হৃদরোগ! চিনে নিন এই মারণব্যাধির ৫টি নীরব লক্ষণ, উপেক্ষা করলেই মৃত্যু
ক্যানসারের ‘অ্যানসার’ লুকিয়ে আছে মানুষের মলে! ‘যুগান্তকারী’ গবেষণায় শোরগোল মার্কিন মুলুকে
কোলন ক্যানসারের যম অতিপরিচিত এই খাবার! নতুন গবেষণায় আশার আলো বিজ্ঞানী মহলে
বাতকর্মেই রোগমুক্তি! বায়ু ত্যাগে ম্যাজিকের মতো সেরে যায় এই রোগ! শুধু জানতে হবে সঠিক পদ্ধতি
সকালে না রাতে? খাবার খাওয়ার আগে না পরে? কখন মাপবেন রক্তচাপ?
পরিচিত এনার্জি ড্রিংকের উপাদানে বৃদ্ধি করতে পারে ব্লাড ক্যানসারের সম্ভাবনা! দাবি নতুন গবেষণার
আগে থেকেই সংকেত দেয় ডায়াবেটিস! সময় মতো আটকাতে চিনে নিন পাঁচ উপসর্গ
তাড়াহুড়ো করে খেয়ে অফিসে ছুটছেন রোজ? অতিদ্রুত খাবার খাওয়া শরীরের কী সর্বনাশ করে জানেন?